কাঁচা ডিম খাওয়া কি স্বাস্থ্যসম্মত?

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. সজল আশফাক :কাঁচা ডিম সম্পর্কে ‘উচ্চ ধারণা’ অনেক আগে থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। সিদ্ধ কিংবা ভাজা ডিমের চেয়ে কাঁচা ডিম বেশি পুষ্টিকর- এটি একটি প্রচলিত বিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে এর উল্টোটাই সত্যি। ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কাঁচা ডিম খেলে তা উল্টো স্বাস্থ্যহানি ঘটিয়ে দিতে পারে।

 

প্রথমত, কাঁচা ডিম রান্না করা ডিমের মতো সহজে হজম হয় না। ডিমের সাদা অংশটিতে থাকে অ্যালবুমিন নামের প্রোটিন। কাঁচা অবস্থায় ডিমের সাদা অংশের মধ্য পরিপাকবিরোধী ক্ষমতা থাকে যা উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সিদ্ধ বা ভাজা ডিম সহজপাচ্য হয়।

 

দ্বিতীয়ত, কাঁচা ডিম খেলে শরীর বায়োটিন নামক ভিটামিন ‘বি’ গ্রুপের একটি ভিটামিন থেকে বঞ্চিত হয়। এ বায়োটিন ডিমের সাদা অংশে উপস্থিত প্রোটিন, এভিডিনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। এভিডিন-বায়োটিনের যুক্ত মিশ্রণ পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হয় না। কিন্তু উত্তাপে এ যুক্ত মিশ্রণটি ভেঙে এভিডিন এবং বায়োটিন পৃথক হয়ে যায় এবং তখন বায়োটিন পৃথকভাবে পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হতে পারে।

 

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা বলছেন, কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব হতে পারে। বায়োটিনের অভাবজনিত এ অবস্থার নাম- এগ হোয়াইট ইনজুরি। কাঁচা ডিম নিয়ে সমস্যা আরও আছে। খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন ব্যাকটেরিয়ার উপযুক্ত বাসস্থান হচ্ছে কাঁচা ডিম। এরকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম সালমোনেলা, যা ডিমের খোলসে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ডিমের ভিতরে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে। আর সালমোনেলাযুক্ত ডিম খেলে সংক্রমণে হঠাৎ বমি, পেটের পীড়া থেকে শুরু করে টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। অথচ ডিম ভালোভাবে রান্না করলে অর্থাৎ ৫-৭ মিনিট গরম বা সিদ্ধ করলে সালমোনেলা ধ্বংস হয়ে যায়।

কিন্তু হালকাভাবে গরম বা পোচ করা সালমোনেলা সংক্রমিত ডিমের সালমোনেলা ধ্বংস নাও হতে পারে। তবে সব ডিমে যেহেতু সালমোনেলা থাকে না তা এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। শুধু অপরিষ্কার স্থানে পড়ে থাকা ডিমেই এ জীবাণু থাকতে পারে।

লেখক: চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোক

» বদরুদ্দীন উমর জুলাই আন্দোলনকে গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দিয়েছেন : প্রধান উপদেষ্টা

» জুলাইযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে : ফারুক-ই-আজম

» সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা নিজ রিসোর্ট থেকে গ্রেফতার

» ফ‍্যাসিস্টের দোসররা জামিনে বের হয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» পাবনায় আসন পুনর্বহালের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

» পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

» দেশে আইয়ামে জাহিলিয়াতের মতো ঘটনা ঘটছে : গোলাম মাওলা রনি

» আব্দুল কাদের কখনো সমীকরণে থাকে না: নাহিদ ইসলাম

» আপাকে ফেরাতে জাপাকে রক্ষা করতে চায় তারা, প্রশ্ন নুরের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

কাঁচা ডিম খাওয়া কি স্বাস্থ্যসম্মত?

সংগৃহীত ছবি

 

ডা. সজল আশফাক :কাঁচা ডিম সম্পর্কে ‘উচ্চ ধারণা’ অনেক আগে থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। সিদ্ধ কিংবা ভাজা ডিমের চেয়ে কাঁচা ডিম বেশি পুষ্টিকর- এটি একটি প্রচলিত বিশ্বাস। প্রকৃতপক্ষে এর উল্টোটাই সত্যি। ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কাঁচা ডিম খেলে তা উল্টো স্বাস্থ্যহানি ঘটিয়ে দিতে পারে।

 

প্রথমত, কাঁচা ডিম রান্না করা ডিমের মতো সহজে হজম হয় না। ডিমের সাদা অংশটিতে থাকে অ্যালবুমিন নামের প্রোটিন। কাঁচা অবস্থায় ডিমের সাদা অংশের মধ্য পরিপাকবিরোধী ক্ষমতা থাকে যা উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সিদ্ধ বা ভাজা ডিম সহজপাচ্য হয়।

 

দ্বিতীয়ত, কাঁচা ডিম খেলে শরীর বায়োটিন নামক ভিটামিন ‘বি’ গ্রুপের একটি ভিটামিন থেকে বঞ্চিত হয়। এ বায়োটিন ডিমের সাদা অংশে উপস্থিত প্রোটিন, এভিডিনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। এভিডিন-বায়োটিনের যুক্ত মিশ্রণ পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হয় না। কিন্তু উত্তাপে এ যুক্ত মিশ্রণটি ভেঙে এভিডিন এবং বায়োটিন পৃথক হয়ে যায় এবং তখন বায়োটিন পৃথকভাবে পরিপাকতন্ত্রে শোষিত হতে পারে।

 

গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা বলছেন, কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিনের অভাব হতে পারে। বায়োটিনের অভাবজনিত এ অবস্থার নাম- এগ হোয়াইট ইনজুরি। কাঁচা ডিম নিয়ে সমস্যা আরও আছে। খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন ব্যাকটেরিয়ার উপযুক্ত বাসস্থান হচ্ছে কাঁচা ডিম। এরকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম সালমোনেলা, যা ডিমের খোলসে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ডিমের ভিতরে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা রাখে। আর সালমোনেলাযুক্ত ডিম খেলে সংক্রমণে হঠাৎ বমি, পেটের পীড়া থেকে শুরু করে টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। অথচ ডিম ভালোভাবে রান্না করলে অর্থাৎ ৫-৭ মিনিট গরম বা সিদ্ধ করলে সালমোনেলা ধ্বংস হয়ে যায়।

কিন্তু হালকাভাবে গরম বা পোচ করা সালমোনেলা সংক্রমিত ডিমের সালমোনেলা ধ্বংস নাও হতে পারে। তবে সব ডিমে যেহেতু সালমোনেলা থাকে না তা এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। শুধু অপরিষ্কার স্থানে পড়ে থাকা ডিমেই এ জীবাণু থাকতে পারে।

লেখক: চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।  সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com